ঢাকা ০১:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাঁড়ি বড় রাখায় যুবককে পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলে!

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:১৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জহির উদ্দিন মানিক (৫০) ও তার ছেলে শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা দিপু আহমেদ (২৫) এর বিরুদ্ধে হরিরামপুর উপজেলার বাল্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ রানা (২৬) নামের এক যুবককে মারধর করে জোর পূর্বক তার মুখের দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

 

জোরপূর্বক দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করা ভুক্তভোগী ওই যুবক জেলার হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের সুরাই গ্রামের মৃত ছোরহাব হোসেনের ছেলে মাসুদ রানা।

২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ১১টার দিকে বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ওই দিনই বিকেলে হরিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মাসুদ রানা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মাসুদ সকালে পিঁয়াজ ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ কিনতে বাজারে যায়। ঔষধ কেনা শেষে টাকা ভাংতি না থাকায় অন্য দোকানে টাকা ভাংতি করতে গেলে, রাস্তা পার হওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা দিপু আহমেদের চোখে নজর পড়তেই সে মাসুদের দিকে তেড়ে এসে বলে তুই আমার দিকে তাকাইলি ক্যান? বলেই শার্টের কলার ধরে এলোপাথারীভাবে চড়থাপ্পর মারতে থাকে। এ ঘটনায় পাশের দোকান থেকে ছুটে আসে দিপুর বাবা জহির উদ্দিন মানিক। তিনিও তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে জোর পূর্বক তার মুখের দাঁড়ি কাটতে বলে এবং পাশের সেলুনে গিয়ে নিজেই দাঁড়ি ফেলে দিতে চাপ দেয় মাসুদকে। না, হলে তাকে আরও মারধরের পাশাপাশি এলাকায় থাকতে দিবে না বলেও জানান মানিক।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী ও মাসুদের প্রতিবেশীরা।

অভিযোগের সূত্র ধরে ২১শে ফেব্রুয়ারী বুধবার সরেজমিনে গেলে বাজারের ব্যবসায়ীরা অনেকেই ভয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায় ওই বাজারের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও ওই আওয়ামী লীগ নেতা। তবে বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ জানান, “কি নিয়ে ঝামেলা তা জানিনা। তবে আমি হই চইয়ের শব্দ পেয়ে যখন তাকাইছি, তখন দেখলাম দিপু মাসুদকে ধরে নিয়ে আইছে এবং দুই একটা থাপ্পড় ও দিছে। মানিক কাকাকে মারতে দেখিনি। তবে সে দাঁড়ি কাটার কথা বলছে। দাঁড়ি না কেটে যেন সে বাড়ি না যায় এ কথা মানিক কাকা বলছে।”

বাস্তা গ্রামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ষাটোর্ধ বয়স্ক আওলাদ হোসেন জানান, “আমি পাশেই এক দোকানে বসে ছিলাম। আমি দেখলাম মানিক ছেলেটি ধাক্কায়তে ধাক্কায়তে এদিকে নিয়ে আসছে। আর বলতেছে তুই এই বাজারে আসবি না। তোরে যদি বাজারে আবার দেখি তাহলে তোর টেংগি ভাইংগ্যা ফালামু। আর তোর দাঁড়ি এতো বড় ক্যান? তোর দাঁড়ি এতো বেঢক ক্যান? এ দাঁড়িতো রাখুইন্যা দাঁড়ি না। দাঁড়ি চাইছ্যে তারপর বাড়ি যাবি। আমি এতো টুকুই দেখছি।”

মাসুদের প্রতিবেশী দুই ভদ্রমহিলা জানান, আমরা তো কৃষিকাজ করি। চকে (ক্ষেতে) যাওয়া লাগে, মরিচ তোলা লাগে। এই সামনে (সুরাই) একটা ব্রিজ হয়েছে। সেখানে মানিক চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার দলবল আড্ডা দেওয়া ও নেশা করার কারণে আমরা সেখান দিয়ে ভয়ে যেতে পারিনা। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলেই তারা আরও বেশি অত্যাচার করে। মাসুদ এর প্রতিবাদ করার কারণেই মাসুদ কে এক বছর আগে একবার মেরেছে। গতকাল ও সেজন্যই বিনা অপরাধে আবারও মেরেছে।

মাসুদের বড় ভাই বাদশা জানান, আমার ভাই ঢাকার দোহারে চাকরি করে। দুই দিন আগে বাড়ি আইছে। কাল বাজারে আসলে বাজারের সভাপতি মানিক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে মারধর করছে। জোর করে তার মুখের দাঁড়ি ফেলতে বাধ্য করছে। এক বছর আগেও তার ছেলে দিপু আমার ভাইকে মারধর করছে। মানিক চেয়ারম্যানের ছেলে আমাগো গ্রামে গিয়ে পোলাপান নিয়ে নেশা করে। তার প্রতিবাদ করতেই তখন মাসুদকে মারধর করে। তখনও বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিছে। মানিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান। তারা প্রভাবশালী। এখন আমরা নিরাপত্তা হীনতায় আছি। আমরা নিরাপত্তাসহ এর সঠিক বিচার চাই।

বাস্তা বাজার কমিটির সেক্রেটারী জামাল জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে আমার বাজারের কমিটির বাকি সদস্যদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব। তবে দাঁড়ি কাটানোর বিষয়টি যদি করে থাকে তাহলে কাজটি ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে বাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাচ্চু মিয়া জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। মানিক ভাইয়ের সাথেও কথা বলেছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলে বিষয় ভালভাবে জেনে কিভাবে মিমাংসা করা যায় সেদিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মুঠোফোনে অভিযুক্ত শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মানিক জানান, আমার ছেলের সাথে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। আমি দুজনকেই ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। আর মাসুদের চুল দাঁড়িতে দেখতে ভাল লাগছিল না। তাই ওকে চুল দাঁড়ি ভাল ভাবে কাটতে বলছি। পরে কাটছে কিনা তাও আমি আর জানিনা। তবে আমি তাকে জোর করিনি।

মুঠোফোনে হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর এ আলম জানান, মারধর ও দাঁড়ি কাটার বিষয়ে একটা অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের অগ্রনায়ক মুফতি রুহুল আমিন মাহমুদী

দাঁড়ি বড় রাখায় যুবককে পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলে!

আপডেট সময় ১০:১৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জহির উদ্দিন মানিক (৫০) ও তার ছেলে শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা দিপু আহমেদ (২৫) এর বিরুদ্ধে হরিরামপুর উপজেলার বাল্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ রানা (২৬) নামের এক যুবককে মারধর করে জোর পূর্বক তার মুখের দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

 

জোরপূর্বক দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করা ভুক্তভোগী ওই যুবক জেলার হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের সুরাই গ্রামের মৃত ছোরহাব হোসেনের ছেলে মাসুদ রানা।

২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ১১টার দিকে বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ওই দিনই বিকেলে হরিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মাসুদ রানা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মাসুদ সকালে পিঁয়াজ ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ কিনতে বাজারে যায়। ঔষধ কেনা শেষে টাকা ভাংতি না থাকায় অন্য দোকানে টাকা ভাংতি করতে গেলে, রাস্তা পার হওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা দিপু আহমেদের চোখে নজর পড়তেই সে মাসুদের দিকে তেড়ে এসে বলে তুই আমার দিকে তাকাইলি ক্যান? বলেই শার্টের কলার ধরে এলোপাথারীভাবে চড়থাপ্পর মারতে থাকে। এ ঘটনায় পাশের দোকান থেকে ছুটে আসে দিপুর বাবা জহির উদ্দিন মানিক। তিনিও তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে জোর পূর্বক তার মুখের দাঁড়ি কাটতে বলে এবং পাশের সেলুনে গিয়ে নিজেই দাঁড়ি ফেলে দিতে চাপ দেয় মাসুদকে। না, হলে তাকে আরও মারধরের পাশাপাশি এলাকায় থাকতে দিবে না বলেও জানান মানিক।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী ও মাসুদের প্রতিবেশীরা।

অভিযোগের সূত্র ধরে ২১শে ফেব্রুয়ারী বুধবার সরেজমিনে গেলে বাজারের ব্যবসায়ীরা অনেকেই ভয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায় ওই বাজারের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও ওই আওয়ামী লীগ নেতা। তবে বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ জানান, “কি নিয়ে ঝামেলা তা জানিনা। তবে আমি হই চইয়ের শব্দ পেয়ে যখন তাকাইছি, তখন দেখলাম দিপু মাসুদকে ধরে নিয়ে আইছে এবং দুই একটা থাপ্পড় ও দিছে। মানিক কাকাকে মারতে দেখিনি। তবে সে দাঁড়ি কাটার কথা বলছে। দাঁড়ি না কেটে যেন সে বাড়ি না যায় এ কথা মানিক কাকা বলছে।”

বাস্তা গ্রামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ষাটোর্ধ বয়স্ক আওলাদ হোসেন জানান, “আমি পাশেই এক দোকানে বসে ছিলাম। আমি দেখলাম মানিক ছেলেটি ধাক্কায়তে ধাক্কায়তে এদিকে নিয়ে আসছে। আর বলতেছে তুই এই বাজারে আসবি না। তোরে যদি বাজারে আবার দেখি তাহলে তোর টেংগি ভাইংগ্যা ফালামু। আর তোর দাঁড়ি এতো বড় ক্যান? তোর দাঁড়ি এতো বেঢক ক্যান? এ দাঁড়িতো রাখুইন্যা দাঁড়ি না। দাঁড়ি চাইছ্যে তারপর বাড়ি যাবি। আমি এতো টুকুই দেখছি।”

মাসুদের প্রতিবেশী দুই ভদ্রমহিলা জানান, আমরা তো কৃষিকাজ করি। চকে (ক্ষেতে) যাওয়া লাগে, মরিচ তোলা লাগে। এই সামনে (সুরাই) একটা ব্রিজ হয়েছে। সেখানে মানিক চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার দলবল আড্ডা দেওয়া ও নেশা করার কারণে আমরা সেখান দিয়ে ভয়ে যেতে পারিনা। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলেই তারা আরও বেশি অত্যাচার করে। মাসুদ এর প্রতিবাদ করার কারণেই মাসুদ কে এক বছর আগে একবার মেরেছে। গতকাল ও সেজন্যই বিনা অপরাধে আবারও মেরেছে।

মাসুদের বড় ভাই বাদশা জানান, আমার ভাই ঢাকার দোহারে চাকরি করে। দুই দিন আগে বাড়ি আইছে। কাল বাজারে আসলে বাজারের সভাপতি মানিক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে মারধর করছে। জোর করে তার মুখের দাঁড়ি ফেলতে বাধ্য করছে। এক বছর আগেও তার ছেলে দিপু আমার ভাইকে মারধর করছে। মানিক চেয়ারম্যানের ছেলে আমাগো গ্রামে গিয়ে পোলাপান নিয়ে নেশা করে। তার প্রতিবাদ করতেই তখন মাসুদকে মারধর করে। তখনও বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিছে। মানিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান। তারা প্রভাবশালী। এখন আমরা নিরাপত্তা হীনতায় আছি। আমরা নিরাপত্তাসহ এর সঠিক বিচার চাই।

বাস্তা বাজার কমিটির সেক্রেটারী জামাল জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে আমার বাজারের কমিটির বাকি সদস্যদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব। তবে দাঁড়ি কাটানোর বিষয়টি যদি করে থাকে তাহলে কাজটি ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে বাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাচ্চু মিয়া জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। মানিক ভাইয়ের সাথেও কথা বলেছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলে বিষয় ভালভাবে জেনে কিভাবে মিমাংসা করা যায় সেদিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মুঠোফোনে অভিযুক্ত শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মানিক জানান, আমার ছেলের সাথে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। আমি দুজনকেই ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। আর মাসুদের চুল দাঁড়িতে দেখতে ভাল লাগছিল না। তাই ওকে চুল দাঁড়ি ভাল ভাবে কাটতে বলছি। পরে কাটছে কিনা তাও আমি আর জানিনা। তবে আমি তাকে জোর করিনি।

মুঠোফোনে হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর এ আলম জানান, মারধর ও দাঁড়ি কাটার বিষয়ে একটা অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।