ঢাকা ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানিকগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর ইয়াজুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মূলহোতাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-(৪ সিপিসি-৩)।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঘিওরের পূর্ব আশাপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে সজীব (২৫), নিয়ামুদ্দিনের ছেলে স্বাধীন (২০) ও সলিমুদ্দিনের ছেলে মোঃ শরিফ (৪০)।

বুধবার (২৪ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘিওর উপজেরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে নিহত ইয়াজুল এর সাথে শরিফের ২ বিঘা জমি কেনা নিয়ে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইয়াজুল শরিফের জমির মূল্য বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। পরবর্তীতে শরিফ জমির চুক্তিতে উল্লেখিত টাকার বেশি দাবি করলে এ নিয়ে ইয়াজুল এর সাথে শরিফের একাধিক বার বাক-বিতণ্ডা হয়। ইয়াজুল জমি না নিয়ে শরিফকে টাকা ফেরত দিতে বললে শরিফ টাকা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। শরিফ টাকা না দেওয়ায় ইয়াজুল এ বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে জানায়।

পরে স্থানীয় লোকজন শালিশ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত দেয় যে, শরিফ ইয়াজুলের টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে। শরিফ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপে গত ছয় মাসে ইয়াজুলের টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু এ নিয়ে শরিফ ইয়াজুলের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে শরিফ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইয়াজুলের চাচাতো ভাই সজিবকে ব্যবহার করে গত ইং গত ২০ আগস্ট তারিখে নদীতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে রাত আনুমানিক সোয়া ৮টার দিকে সজিবের মুঠোফোনের মাধ্যমে ইয়াজুলকে ফোন করে সজিবের বাড়ির পিছনে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে অপেক্ষমান শরিফ সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন এবং সজিব ও ইয়াজুল স্বাধীনের ট্রলারে উঠে কালি গঙ্গানদীতে ঘুরতে যায়। ট্রলারটি কালিগঙ্গা নদীতে কিছু দুর যাওয়ার পর রাত ৯টার দিকে সজিব, শরিফ ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইয়াজুলের মাথায়, দুই হাতের কুনই ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাতারি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর আসামীরা নিহত ইয়াজুলের মরদেহ এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত আলামত নদীতে ফেলে দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। অনেক রাত হওয়ায় ইয়াজুল বাড়ীতে ফিরে না আসায় ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার ভিকটিম ইয়াজুল মিয়ার মোবাইলে ফোন করলে ফোন বন্ধ পেয়ে পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্য সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘিওর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে, যাহার জিডি নং-১২৭৮, তাং-২২/০৮/২০২৩ খ্রি:।

জিডি করার আনুমানিক ১৫ মিনিট পরই রিমা আক্তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লোকমারফত জানতে পারে যে, ঘিওরের সিংজুরী ইউনিনের পূর্ব আশাপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ে জানু মিয়ার ভুট্টাক্ষেত সংলগ্ন (ডুবচরে) পানিতে একটি লাশ ভাসছে। খবর পেয়ে রিমা আক্তার পরিবারের সকলে মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত লাশটি ইয়াজুল মিয়ার বলে সনাক্ত করে। ভিকটিমের লাশের মাথার উপরে ও পিছনে, দুই হাতের কুনই ও হাতের আঙ্গুলে কোপের দাগ সহ লাশটি অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ঘিওর থানা পুলিশকে খবর দিলে ঘিওর থানা পুলিশ ও পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নদী হতে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় নিহত ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার বাদী হয়ে ঘিওর থানায় সজীব, স্বাধীনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজু হওয়ার পর ঘিওর থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ (সিপিসি-৩) ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তৎপর হয়।

র‌্যাবের লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীরা ঘিওর থানাধীন এলাকায় অবস্থান করছে জানতে পেরে যায় র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ও মূলহোতা সজিব, শরীফ সহ সহযোগী আসামী স্বাধীনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে।পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট নৌ-পুলিশ থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় এক অসহায় পরিবারের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও হত্যার হুমকিতে আদালতে মামলা

মানিকগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩

আপডেট সময় ০৫:৩০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর ইয়াজুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মূলহোতাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-(৪ সিপিসি-৩)।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঘিওরের পূর্ব আশাপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে সজীব (২৫), নিয়ামুদ্দিনের ছেলে স্বাধীন (২০) ও সলিমুদ্দিনের ছেলে মোঃ শরিফ (৪০)।

বুধবার (২৪ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘিওর উপজেরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে নিহত ইয়াজুল এর সাথে শরিফের ২ বিঘা জমি কেনা নিয়ে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইয়াজুল শরিফের জমির মূল্য বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। পরবর্তীতে শরিফ জমির চুক্তিতে উল্লেখিত টাকার বেশি দাবি করলে এ নিয়ে ইয়াজুল এর সাথে শরিফের একাধিক বার বাক-বিতণ্ডা হয়। ইয়াজুল জমি না নিয়ে শরিফকে টাকা ফেরত দিতে বললে শরিফ টাকা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। শরিফ টাকা না দেওয়ায় ইয়াজুল এ বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে জানায়।

পরে স্থানীয় লোকজন শালিশ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত দেয় যে, শরিফ ইয়াজুলের টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে। শরিফ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপে গত ছয় মাসে ইয়াজুলের টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু এ নিয়ে শরিফ ইয়াজুলের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে শরিফ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইয়াজুলের চাচাতো ভাই সজিবকে ব্যবহার করে গত ইং গত ২০ আগস্ট তারিখে নদীতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে রাত আনুমানিক সোয়া ৮টার দিকে সজিবের মুঠোফোনের মাধ্যমে ইয়াজুলকে ফোন করে সজিবের বাড়ির পিছনে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে অপেক্ষমান শরিফ সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন এবং সজিব ও ইয়াজুল স্বাধীনের ট্রলারে উঠে কালি গঙ্গানদীতে ঘুরতে যায়। ট্রলারটি কালিগঙ্গা নদীতে কিছু দুর যাওয়ার পর রাত ৯টার দিকে সজিব, শরিফ ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইয়াজুলের মাথায়, দুই হাতের কুনই ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাতারি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর আসামীরা নিহত ইয়াজুলের মরদেহ এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত আলামত নদীতে ফেলে দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। অনেক রাত হওয়ায় ইয়াজুল বাড়ীতে ফিরে না আসায় ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার ভিকটিম ইয়াজুল মিয়ার মোবাইলে ফোন করলে ফোন বন্ধ পেয়ে পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্য সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘিওর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে, যাহার জিডি নং-১২৭৮, তাং-২২/০৮/২০২৩ খ্রি:।

জিডি করার আনুমানিক ১৫ মিনিট পরই রিমা আক্তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লোকমারফত জানতে পারে যে, ঘিওরের সিংজুরী ইউনিনের পূর্ব আশাপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ে জানু মিয়ার ভুট্টাক্ষেত সংলগ্ন (ডুবচরে) পানিতে একটি লাশ ভাসছে। খবর পেয়ে রিমা আক্তার পরিবারের সকলে মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত লাশটি ইয়াজুল মিয়ার বলে সনাক্ত করে। ভিকটিমের লাশের মাথার উপরে ও পিছনে, দুই হাতের কুনই ও হাতের আঙ্গুলে কোপের দাগ সহ লাশটি অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ঘিওর থানা পুলিশকে খবর দিলে ঘিওর থানা পুলিশ ও পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নদী হতে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় নিহত ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার বাদী হয়ে ঘিওর থানায় সজীব, স্বাধীনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজু হওয়ার পর ঘিওর থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ (সিপিসি-৩) ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তৎপর হয়।

র‌্যাবের লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীরা ঘিওর থানাধীন এলাকায় অবস্থান করছে জানতে পেরে যায় র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ও মূলহোতা সজিব, শরীফ সহ সহযোগী আসামী স্বাধীনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে।পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট নৌ-পুলিশ থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।