ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই গ্রাম পুলিশ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:২০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০২৩
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ০৯ মার্চ
মানিকগঞ্জে ভাতাভোগীর মোবাইল নাম্বারের পরিবর্তে নিজেদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে বয়স্ক ভাতার টাকা এবং এলাকার সুস্থ-স্বাভাবিক জনগণকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই গ্রাম পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) অভিযুক্ত দুই গ্রাম পুলিশ মো. হারুন ও মো. উজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দুই ভুক্তভোগী ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলী।
অভিযোগ সূত্রে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. হারুন ও মো. উজ্জল হোসেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে অফিস খরচের দোহাই দিয়ে ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলীর কাছ থেকে ৩৫০০ টাকা এবং তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি ও মোবাইল নাম্বার নেয়। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোন টাকা পায়নি তারা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ভাতাভোগীদের মোবাইল নাম্বারের পরিবর্তে গ্রাম পুলিশ মো. উজ্জল মিয়ার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার ও মো. হারুনের ছেলে মো. জুয়েল মিয়ার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে এবং ওই নাম্বারগুলোতে নিয়মিত টাকা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার একই ইউনিয়নের ডাউটিয়া, পাথরাইল ও রমনপুর এলাকার তিন শতাধিক মানুষকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই দুই গ্রাম পুলিশ। এরমধ্যে প্রায় আড়াইশ জন সুস্থ নারী-পুরুষকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছে তারা।
ভুক্তভোগী ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলী বলেন, কোন প্রকার আয় রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করার মতো শারিরিক সক্ষমতা আমাদের নেই। সরকারি ভাতা ও প্রতিবেশিদের সাহায্যে কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি আমরা। গ্রাম পুলিশ হারুন ও উজ্জল প্রতারণা করে আমাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ভূক্তভোগী সালেহা বেগম বলেন, আমার পরিবারে ৫ জন সদস্য। একজনের শ্বাসের সমস্যা এবং তিনজনের সিজার অপারেশন করে বাচ্চা হয়েছে। এই ৪ জনকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে হারুন সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধি কার্ড পেলেও এখনো কোন ভাতা পাইনি।
মর্জিনা বেগম নামের আরেকজন বলেন, আমার পিত্তথলির অপারশন করা হয়েছেলি, আর কোন শারিরীক সমস্যা নেই। আমাকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে হারুন আমার কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়ে নিয়েছে।
বেদেনা নামের আরেক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হারুন ও উজ্জল চৌকিদার আমার ১০ জন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমাদের কার্ডও দেয়না, টাকাও ফেরত দেয়না। কালাম মৃধা নামের একজন বলেন, আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল। আমাকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে উজ্জল আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে।
স্থানীয় আউয়াল ও সালেহা বেগম জানান, গ্রামের হাতেগুনা দুয়েকটা পরিবার ছাড়া এমন কোন পরিবার নেই যে হারুন ও উজ্জল তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ হারুনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এটা ঠিক। কিন্ত প্রতিটি কাজ থেকে আমি মাত্র ৫০০ টাকা করে পেয়েছি। বাকি টাকা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তানিয়া ম্যাডামকে দিয়েছি। তবে উজ্জল হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, টাকা পয়সা যা নেওয়ার হারুন নিয়েছে। আমি কোন টাকা নেইনি। আর ভাতাভোগীর মোবাইল নাম্বারের জায়গায় ভূলে আমার স্ত্রীর নাম্বার দেয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুশিয়া আক্তার বলেন, আমি এখানে জয়েন করার আগে এখানে কিছু ভূয়া প্রতিবন্ধি কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে ভূয়া প্রতিবন্ধি কার্ড চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিল করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আর যে সকল ভাতাভোগীদের নাম্বার সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করে দিব।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, দুই জন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের অগ্রনায়ক মুফতি রুহুল আমিন মাহমুদী

প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই গ্রাম পুলিশ

আপডেট সময় ০৮:২০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০২৩

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ০৯ মার্চ
মানিকগঞ্জে ভাতাভোগীর মোবাইল নাম্বারের পরিবর্তে নিজেদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে বয়স্ক ভাতার টাকা এবং এলাকার সুস্থ-স্বাভাবিক জনগণকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই গ্রাম পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) অভিযুক্ত দুই গ্রাম পুলিশ মো. হারুন ও মো. উজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দুই ভুক্তভোগী ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলী।
অভিযোগ সূত্রে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. হারুন ও মো. উজ্জল হোসেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে অফিস খরচের দোহাই দিয়ে ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলীর কাছ থেকে ৩৫০০ টাকা এবং তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি ও মোবাইল নাম্বার নেয়। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোন টাকা পায়নি তারা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ভাতাভোগীদের মোবাইল নাম্বারের পরিবর্তে গ্রাম পুলিশ মো. উজ্জল মিয়ার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার ও মো. হারুনের ছেলে মো. জুয়েল মিয়ার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে এবং ওই নাম্বারগুলোতে নিয়মিত টাকা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার একই ইউনিয়নের ডাউটিয়া, পাথরাইল ও রমনপুর এলাকার তিন শতাধিক মানুষকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই দুই গ্রাম পুলিশ। এরমধ্যে প্রায় আড়াইশ জন সুস্থ নারী-পুরুষকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছে তারা।
ভুক্তভোগী ছাহেরা বেগম ও হোসেন আলী বলেন, কোন প্রকার আয় রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করার মতো শারিরিক সক্ষমতা আমাদের নেই। সরকারি ভাতা ও প্রতিবেশিদের সাহায্যে কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি আমরা। গ্রাম পুলিশ হারুন ও উজ্জল প্রতারণা করে আমাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ভূক্তভোগী সালেহা বেগম বলেন, আমার পরিবারে ৫ জন সদস্য। একজনের শ্বাসের সমস্যা এবং তিনজনের সিজার অপারেশন করে বাচ্চা হয়েছে। এই ৪ জনকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে হারুন সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধি কার্ড পেলেও এখনো কোন ভাতা পাইনি।
মর্জিনা বেগম নামের আরেকজন বলেন, আমার পিত্তথলির অপারশন করা হয়েছেলি, আর কোন শারিরীক সমস্যা নেই। আমাকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে হারুন আমার কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়ে নিয়েছে।
বেদেনা নামের আরেক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হারুন ও উজ্জল চৌকিদার আমার ১০ জন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমাদের কার্ডও দেয়না, টাকাও ফেরত দেয়না। কালাম মৃধা নামের একজন বলেন, আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল। আমাকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে উজ্জল আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে।
স্থানীয় আউয়াল ও সালেহা বেগম জানান, গ্রামের হাতেগুনা দুয়েকটা পরিবার ছাড়া এমন কোন পরিবার নেই যে হারুন ও উজ্জল তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ হারুনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এটা ঠিক। কিন্ত প্রতিটি কাজ থেকে আমি মাত্র ৫০০ টাকা করে পেয়েছি। বাকি টাকা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তানিয়া ম্যাডামকে দিয়েছি। তবে উজ্জল হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, টাকা পয়সা যা নেওয়ার হারুন নিয়েছে। আমি কোন টাকা নেইনি। আর ভাতাভোগীর মোবাইল নাম্বারের জায়গায় ভূলে আমার স্ত্রীর নাম্বার দেয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুশিয়া আক্তার বলেন, আমি এখানে জয়েন করার আগে এখানে কিছু ভূয়া প্রতিবন্ধি কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে ভূয়া প্রতিবন্ধি কার্ড চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিল করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আর যে সকল ভাতাভোগীদের নাম্বার সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করে দিব।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, দুই জন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।