ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আযহা। এক দশক আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেই একই চামড়া ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে, আয় কমেছে এতিমখানাগুলো।

ভরসা নেই কেন বাংলাদেশে কোরবানির চামড়ার বেঁধে দেওয়া দামে?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:২০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২
  • ৩০৯ বার পড়া হয়েছে

পরপর কয়েক বছর কাঁচা চামড়ার বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিলে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া শুরু করে।

তারপরও নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে কাঁচা চামড়া কিনতে পারছে ট্যানারিগুলো। পানির দরে না বিক্রি করে অসংখ্য চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এর কারণ হিসেবে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি হওয়া ছাড়াও চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারার কথা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আবার ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত করার খরচ এত বেড়ে গেছে যে সস্তায় কাঁচা চামড়া কিনলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

 

পুরো ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে

লালবাগের ব্যবসায়ী বাকি বিল্লাহ প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে বাড়ি বাড়ি থেকে না হলে এতিমখানা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে সেগুলো ট্যানারিতে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতেন।

তার মতো আশেপাশের আরও অনেকেই এই ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে, তিনি জানান গত তিন বছর লাখ লাখ টাকা লোকসান দেয়ার পর এবার আর এই ব্যবসা আর করবেন না।

“ধরেন বড় একটা ট্রাকে প্রায় ১০ লাখ টাকার চামড়া নিয়ে গেছি। ট্যানারি বলে যে দুই লাখ টাকায় দিলে দাও না হলে যাও। এভাবে অনেকে চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে। কোন দামই দেয় না। এভাবে গত বছর আড়াই লাখ টাকার মতো লস করেছি। পুরো ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে। তারাই সব লাভ করবে আর কাউকে ব্যবসা করতে দেবে না।”

 

চামড়ার টাকায় নির্ভর করি না

বাংলাদেশে অধিকাংশ কোরবানিদাতারা তাদের জবাই করা পশুর চামড়া বিনামূল্যে মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় দান করে থাকেন।

এক সময় মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার একটি বড় খরচ এই চামড়া বিক্রির টাকা থেকে তোলা হতো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো সেদিকে আর নির্ভর করছে না।

ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সহকারী তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “আগে সব চামড়ার কম বেশি দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন গরুর চামড়ার দামও অনেক কম। ছাগলের চামড়ার বলতে গেলে কোন দামই নেই। আগে চামড়া কালেকশন করলে একটা ভালো ইনকাম হতো। কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। তাই আমরাও আর চামড়ার টাকায় নির্ভর করি না।”

অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়ার দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার কথাও জানিয়েছেন।

 

সরকারের নির্ধারিত দামে ভরসা নেই

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এবার আগের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৭ টাকা ও খাসির চামড়া ৩ টাকা বেশি দরে কিনতে হবে ট্যানারি মালিকদের।

অবশ্য চামড়ার দাম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্ন হবে।

ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া কিনতে হবে ৪৭-৫২ টাকায়, যা গত বছর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এই দর তার আগের বছর বা ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৪ টাকা দাম পড়বে। গত বছর এই দাম ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা বর্গফুট।

এছাড়া, সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। গত বছর এই দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

তবে সরকারের এই নির্ধারিত দামে ভরসা নেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ভরসা দিতে পাচ্ছে না সরকারও।

 

সরকার কী বলছে?

গত কয়েক বছরে চামড়ার বাজারে অস্থিতিশীলতার পেছনের কারণ হিসাবে চাহিদার তুলনায় বেশি যোগান এবং চামড়া সংরক্ষণের দুর্বলতার কথা বলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি বলেন, “আগের চেয়ে এখন কোরবানি হচ্ছে বেশি। একদিনে কোরবানি হওয়ার অতিরিক্ত সাপ্লাই থাকে। সে কারণেই দাম ওঠেনা। তাছাড়া, কোরবানি যারা দিচ্ছেন তারা যদি লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে চামড়াটি এতিমখানায় দিতেন তাহলে চামড়া তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকতো, পরে দর কষাকষির সুযোগ থাকতো।”

এদিকে, চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারি কোন ব্যবস্থা না থাকায় এবং পুরো চামড়া খাত বেসরকারি খাতের অধীনে হওয়ায় সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান মি. ঘোষ। “চামড়ার পুরো কাজটাই হয় বেসরকারি খাতে। সরকারিভাবে চামড়া কিনে রাখারও কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য আমরা জোর দিয়েছি লবণ মাখানো এবং স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করার ওপর। সেটা এতিমখানায় হতে পারে, জেলাগুলোয় বিসিকের যদি জায়গা থাকে সেখানেও হতে পারে।”

সরকার প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে এবং জেলা পর্যায়ে চামড়ার সংরক্ষণাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

 

কেন দাম দিতে চাইছে না ট্যানারিগুলো

ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটার প্রভাব পড়ছে কাঁচা চামড়ার দামে।

তার কথা – আগে প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৩০ টাকার মতো লাগলেও এখন সেটা ৫০ টাকার মতো দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি কেমিক্যালের দাম বেড়ে গেছে।

বেড়েছে লবণের দামও। তিন মাস আগেও ৬০ কেজির এক বস্তা লবণের দাম ছিল ৪৫০ টাকা সেটা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যে কারণে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের খরচও বেড়ে গেছে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে অল্প দামে হুবহু চামড়ার মতো আর্টিফিশিয়াল লেদার বা পিউ লেদার চলে আসায় চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা অনেকাংশে কমে গিয়েছে বলে জানান ট্যানারি মালিক শাহিন আহমেদ।

মি. আহমেদ বলেন, “যেখানে রেডিমেড পণ্যের চাহিদা কমে গেছে, সেখানে কাঁচা চামড়ার বাজার বলতে গেলে নেই।”

প্রশ্ন উঠছে যে বাজারে যদি কাঁচা চামড়ার দাম এতো কম হয় তাহলে চামড়াজাত পণ্যের দাম এতো বেশি কেন?

এ ব্যাপারে চামড়াজাত পণ্য ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার খরচ বাড়ার কথা তুলে ধরছেন। শাহিন আহমেদ বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজার, কেমিক্যালের দাম, লবণের দাম, চামড়া প্রসেস করা, কারখানার শ্রমিকের খরচ – এসবের ওপর নির্ভর করেচামড়ার দাম। সব কিছুর দামই বাড়তি।”

 

কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই

সেইসাথে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকাকেও এই কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার কারণ বলে মনে করছে বাণিজ্য সচিব মি. ঘোষ।

চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ হলেও সেখানে রপ্তানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের সনদ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিবেশ স্বীকৃতি সনদের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশগত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারায় এর কোনটিই নেই বাংলাদেশের। এ কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ঢুকতে পারছে না। যেটুকু রপ্তানি হচ্ছে, তাতে দাম পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় কম।

সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও সেটা পুরোপুরি কমপ্লায়েন্ট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে, ন্যায্য দামে রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে না।

সরকার যদি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করে তাহলে এই খাত লাভবান করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজবাড়ীর পাংশায় প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থা কতৃক আয়োজিত ঈদ পূর্ণমিলন

বাংলাদেশে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আযহা। এক দশক আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেই একই চামড়া ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে, আয় কমেছে এতিমখানাগুলো।

ভরসা নেই কেন বাংলাদেশে কোরবানির চামড়ার বেঁধে দেওয়া দামে?

আপডেট সময় ০১:২০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২

পরপর কয়েক বছর কাঁচা চামড়ার বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিলে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া শুরু করে।

তারপরও নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে কাঁচা চামড়া কিনতে পারছে ট্যানারিগুলো। পানির দরে না বিক্রি করে অসংখ্য চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এর কারণ হিসেবে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি হওয়া ছাড়াও চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারার কথা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আবার ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত করার খরচ এত বেড়ে গেছে যে সস্তায় কাঁচা চামড়া কিনলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

 

পুরো ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে

লালবাগের ব্যবসায়ী বাকি বিল্লাহ প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে বাড়ি বাড়ি থেকে না হলে এতিমখানা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে সেগুলো ট্যানারিতে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতেন।

তার মতো আশেপাশের আরও অনেকেই এই ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে, তিনি জানান গত তিন বছর লাখ লাখ টাকা লোকসান দেয়ার পর এবার আর এই ব্যবসা আর করবেন না।

“ধরেন বড় একটা ট্রাকে প্রায় ১০ লাখ টাকার চামড়া নিয়ে গেছি। ট্যানারি বলে যে দুই লাখ টাকায় দিলে দাও না হলে যাও। এভাবে অনেকে চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে। কোন দামই দেয় না। এভাবে গত বছর আড়াই লাখ টাকার মতো লস করেছি। পুরো ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে। তারাই সব লাভ করবে আর কাউকে ব্যবসা করতে দেবে না।”

 

চামড়ার টাকায় নির্ভর করি না

বাংলাদেশে অধিকাংশ কোরবানিদাতারা তাদের জবাই করা পশুর চামড়া বিনামূল্যে মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় দান করে থাকেন।

এক সময় মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার একটি বড় খরচ এই চামড়া বিক্রির টাকা থেকে তোলা হতো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো সেদিকে আর নির্ভর করছে না।

ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সহকারী তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “আগে সব চামড়ার কম বেশি দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন গরুর চামড়ার দামও অনেক কম। ছাগলের চামড়ার বলতে গেলে কোন দামই নেই। আগে চামড়া কালেকশন করলে একটা ভালো ইনকাম হতো। কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। তাই আমরাও আর চামড়ার টাকায় নির্ভর করি না।”

অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়ার দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার কথাও জানিয়েছেন।

 

সরকারের নির্ধারিত দামে ভরসা নেই

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এবার আগের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৭ টাকা ও খাসির চামড়া ৩ টাকা বেশি দরে কিনতে হবে ট্যানারি মালিকদের।

অবশ্য চামড়ার দাম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্ন হবে।

ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া কিনতে হবে ৪৭-৫২ টাকায়, যা গত বছর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এই দর তার আগের বছর বা ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৪ টাকা দাম পড়বে। গত বছর এই দাম ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা বর্গফুট।

এছাড়া, সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। গত বছর এই দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

তবে সরকারের এই নির্ধারিত দামে ভরসা নেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ভরসা দিতে পাচ্ছে না সরকারও।

 

সরকার কী বলছে?

গত কয়েক বছরে চামড়ার বাজারে অস্থিতিশীলতার পেছনের কারণ হিসাবে চাহিদার তুলনায় বেশি যোগান এবং চামড়া সংরক্ষণের দুর্বলতার কথা বলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি বলেন, “আগের চেয়ে এখন কোরবানি হচ্ছে বেশি। একদিনে কোরবানি হওয়ার অতিরিক্ত সাপ্লাই থাকে। সে কারণেই দাম ওঠেনা। তাছাড়া, কোরবানি যারা দিচ্ছেন তারা যদি লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে চামড়াটি এতিমখানায় দিতেন তাহলে চামড়া তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকতো, পরে দর কষাকষির সুযোগ থাকতো।”

এদিকে, চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারি কোন ব্যবস্থা না থাকায় এবং পুরো চামড়া খাত বেসরকারি খাতের অধীনে হওয়ায় সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান মি. ঘোষ। “চামড়ার পুরো কাজটাই হয় বেসরকারি খাতে। সরকারিভাবে চামড়া কিনে রাখারও কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য আমরা জোর দিয়েছি লবণ মাখানো এবং স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করার ওপর। সেটা এতিমখানায় হতে পারে, জেলাগুলোয় বিসিকের যদি জায়গা থাকে সেখানেও হতে পারে।”

সরকার প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে এবং জেলা পর্যায়ে চামড়ার সংরক্ষণাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

 

কেন দাম দিতে চাইছে না ট্যানারিগুলো

ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটার প্রভাব পড়ছে কাঁচা চামড়ার দামে।

তার কথা – আগে প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৩০ টাকার মতো লাগলেও এখন সেটা ৫০ টাকার মতো দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি কেমিক্যালের দাম বেড়ে গেছে।

বেড়েছে লবণের দামও। তিন মাস আগেও ৬০ কেজির এক বস্তা লবণের দাম ছিল ৪৫০ টাকা সেটা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যে কারণে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের খরচও বেড়ে গেছে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে অল্প দামে হুবহু চামড়ার মতো আর্টিফিশিয়াল লেদার বা পিউ লেদার চলে আসায় চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা অনেকাংশে কমে গিয়েছে বলে জানান ট্যানারি মালিক শাহিন আহমেদ।

মি. আহমেদ বলেন, “যেখানে রেডিমেড পণ্যের চাহিদা কমে গেছে, সেখানে কাঁচা চামড়ার বাজার বলতে গেলে নেই।”

প্রশ্ন উঠছে যে বাজারে যদি কাঁচা চামড়ার দাম এতো কম হয় তাহলে চামড়াজাত পণ্যের দাম এতো বেশি কেন?

এ ব্যাপারে চামড়াজাত পণ্য ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার খরচ বাড়ার কথা তুলে ধরছেন। শাহিন আহমেদ বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজার, কেমিক্যালের দাম, লবণের দাম, চামড়া প্রসেস করা, কারখানার শ্রমিকের খরচ – এসবের ওপর নির্ভর করেচামড়ার দাম। সব কিছুর দামই বাড়তি।”

 

কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই

সেইসাথে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকাকেও এই কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার কারণ বলে মনে করছে বাণিজ্য সচিব মি. ঘোষ।

চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ হলেও সেখানে রপ্তানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের সনদ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিবেশ স্বীকৃতি সনদের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশগত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারায় এর কোনটিই নেই বাংলাদেশের। এ কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ঢুকতে পারছে না। যেটুকু রপ্তানি হচ্ছে, তাতে দাম পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় কম।

সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও সেটা পুরোপুরি কমপ্লায়েন্ট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে, ন্যায্য দামে রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে না।

সরকার যদি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করে তাহলে এই খাত লাভবান করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।