ঢাকা ০৪:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী মুক্ত দিবস ১৮ ডিসেম্বর

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৪৪:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

রাজবাড়ী শহর মূলত রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এখানে ১৫-২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। পাকিস্তান আমলে এদের প্রচণ্ড দাপট ছিলো। পুরো রেলই ছিলো তাদের দখলে।

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী শহর মূলত রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এখানে ১৫-২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। পাকিস্তান আমলে এদের প্রচণ্ড দাপট ছিলো। পুরো রেলই ছিলো তাদের দখলে।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারীদের তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ শেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়।

পাক বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও পোড়াও ও গণহত্যা।

১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল বুধবার, পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম পর্যায়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট আক্রমণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ দিন পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। সেদিন সকালে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ২৫ জন শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।

আরিচা থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর চিমারের নেতৃত্বে ‘রণবহর’ নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক বাহিনী। তারা তিনটি স্টিমার (সুসজ্জিত অস্ত্রসহ), দু’টি গানবোর্ট (নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ), একটি গোমতী ফেরিসহ (অবাঙালি প্যারা মেলেটারি) তিনটি লঞ্চ, দু’টি হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টসহ প্রস্তুতি গ্রহণ করে ভোর ৪টার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ফজরের সময় ঘুমন্ত গোয়ালন্দবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মো. আব্দুস সামাদ মোল্লা জানান, পাক বাহিনী যাতে রাজবাড়ী শহরে তাদের সাজোয়া যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য রাজবাড়ীর-ফরিদপুর সড়কের আহল্লাদীপুর ব্রিজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তি বাহিনীরা সমবেত হয়। এসময় পাক বাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশি শহীদ হন। তিনিই রাজবাড়ীর প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী তখনও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর বিহারীদের হাতে ছিলো অবরুদ্ধ।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারীদের চলে তুমুল যুদ্ধ। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়। উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ নিজাম মন্টু জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে তারা আপন সাত ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন জানান, রাজবাড়ী মূলত রেলওয়ে অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ১৫/২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। তারা পাক বাহিনীর সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জ থেকে যুবকদের ধরে এনে লোকোশেডে হত্যা করে কূপের মধ্যে ফেলো দিতো। বিহারীরা তাদের অত্যাচার, জুলুম ও তাদের সমস্ত অপকর্মের কথা চিন্তা করে বুঝতে পারে, তাদের অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। তাই তারা আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হলেও রাজবাড়ীতে তখনও যুদ্ধ চলছিল। পরে ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় রাজবাড়ী।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের অগ্রনায়ক মুফতি রুহুল আমিন মাহমুদী

রাজবাড়ী মুক্ত দিবস ১৮ ডিসেম্বর

আপডেট সময় ০৩:৪৪:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

রাজবাড়ী শহর মূলত রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এখানে ১৫-২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। পাকিস্তান আমলে এদের প্রচণ্ড দাপট ছিলো। পুরো রেলই ছিলো তাদের দখলে।

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী শহর মূলত রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এখানে ১৫-২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। পাকিস্তান আমলে এদের প্রচণ্ড দাপট ছিলো। পুরো রেলই ছিলো তাদের দখলে।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারীদের তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ শেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়।

পাক বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও পোড়াও ও গণহত্যা।

১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল বুধবার, পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম পর্যায়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট আক্রমণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ দিন পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। সেদিন সকালে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ২৫ জন শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।

আরিচা থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর চিমারের নেতৃত্বে ‘রণবহর’ নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক বাহিনী। তারা তিনটি স্টিমার (সুসজ্জিত অস্ত্রসহ), দু’টি গানবোর্ট (নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ), একটি গোমতী ফেরিসহ (অবাঙালি প্যারা মেলেটারি) তিনটি লঞ্চ, দু’টি হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টসহ প্রস্তুতি গ্রহণ করে ভোর ৪টার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ফজরের সময় ঘুমন্ত গোয়ালন্দবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মো. আব্দুস সামাদ মোল্লা জানান, পাক বাহিনী যাতে রাজবাড়ী শহরে তাদের সাজোয়া যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য রাজবাড়ীর-ফরিদপুর সড়কের আহল্লাদীপুর ব্রিজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তি বাহিনীরা সমবেত হয়। এসময় পাক বাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশি শহীদ হন। তিনিই রাজবাড়ীর প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী তখনও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর বিহারীদের হাতে ছিলো অবরুদ্ধ।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারীদের চলে তুমুল যুদ্ধ। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়। উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ নিজাম মন্টু জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে তারা আপন সাত ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন জানান, রাজবাড়ী মূলত রেলওয়ে অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ১৫/২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। তারা পাক বাহিনীর সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জ থেকে যুবকদের ধরে এনে লোকোশেডে হত্যা করে কূপের মধ্যে ফেলো দিতো। বিহারীরা তাদের অত্যাচার, জুলুম ও তাদের সমস্ত অপকর্মের কথা চিন্তা করে বুঝতে পারে, তাদের অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। তাই তারা আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হলেও রাজবাড়ীতে তখনও যুদ্ধ চলছিল। পরে ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় রাজবাড়ী।