ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী হয়ে উঠুক শক্তির প্রতিক – শারমিন রেজা লোটাস

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • ২৫০ বার পড়া হয়েছে

নারী হয়ে উঠুক শক্তির প্রতিক

লেখক, শারমিন রেজা লোটাস।

ওগো নারী
তোমরা আজ জেগে ওঠো
সবে মিলে এক হও।
বেরিয়ে এসো রাজপথে
ঘরকন্না থেকে এভারেস্ট বিজয় সর্বক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশের নারীদের জয় জয়কার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ সহ সব নারীকে অভিনন্দন শক্তি সাহস , আবেগ, মমতায় , হে নারী তােমাকে অভিবাদন। এখনই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের উপযুক্ত সময়। পুলিশ যাতে নারী বান্ধব হয় সে ব্যাপারে পুলিশ কে প্রশিক্ষন দেওয়া হােক। শিশুরা কয়েক বছরের মধ্যেই জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উন্নিত হয় ।তাদের কে শেখানাে দরকার মেয়ে সহপাঠিকে মেয়ে হিসাবে না দেখে মানুষ হিসাবে দেখতে হবে। হে নারী, থমকে দাঁড়াবার জন্য এতো টা পথ পার হয়া নয়। এগিয়ে চলো এখন কেবলি এগিযয় যাওয়া পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের জন্য সামাজিক ভাবে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। নারী ভিন্ন ভিন্ন রুপে আছে বলেই পৃথিবীটা এতো সুন্দর মাতা ভগিনী , স্ত্রী, কন্যা রুপে জীবন এতাে আনন্দময় ব্যাক্তিগত। নিরাপত্তাহীনতা সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য সত্ত্বেও নারীদের মেধার পরিচয় ,অর্থনৈতিক করমকান্দ। আসুন আমরা দেই নারীকে যােগ্যতম সন্মান মর্যাদার স্বীকৃতি। নিরাপত্তা প্রদানের প্রক্রিয়া ।সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরন, অন্যায় নির্যাতন থেকে নারী জাতি মুক্তি লাভ করুক।

‘নারী’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সামনে ভেসে উঠে মমতাময়ী মায়ের প্রতিচ্ছবি যার মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি। সেই অপার মমতার অধিকারী নারীদের কে কেন্দ্র করেই পালিত হয় নারী দিবস যদিও এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। অমিত সম্ভাবনার অধিকারী নারী শক্তির যথাযথ বিকাশ সম্ভব হয়না নূন্যতম সুযোগ এবং যথাযথ মুল্যায়নের অভাবে। পুরষশাসিত সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের ছোট করে দেখা হয়। দমিয়ে রাখা হয় তাদের দিগ্বিজয়ী শক্তিকে, তাদেরকে সম্মুখীন হতে হয় অনেক সহিংসতার। ধরণীতে নারীদের জয়গান গাওয়া হলেও এখনো প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনোও নারীরা নিজগৃহে অত্যাচারের মুখোমুখি! হয়, এখনোও তাদের সহ্য করতে হয় মানসিক যন্ত্রণার। যেই নারীরা নিজ পরিবারের কথা চিন্তা করে জীবন ত্যাগ করতে পারে তারাই পরিবার সহ সামাজিকভাবে প্রাপ্য সম্মান পায়না। নারীশ্রমিকদের এখনো আমাদের দেশে ছোট করে দেখা হয়, তারা তাদের ন্যায্য মজুরিও পায়না। এভাবেই বহুকাল থেকে নারীরা বৈষম্যের সম্মুখীন হয়। এখনো তাদের যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধির শিকার হতে হয়। এখনো খবরের পাতায় ধর্ষণের খবর অহরহ প্রকাশিত হয় অর্থাৎ নারীদের নিরাপত্তা প্রদান এখনো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়না। আমাদেরকে প্রথমেই সেই মানসিকতা দূর করতে হবে, পুরুষদের অংশগ্রহন এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি। আলোকিত হয়ে উঠুক নিজ শক্তিতে, আলোকিত করুক সমাজ ও পৃথিবীকে, নিজ উদ্যমে জয় করুর সাফল্যের প্রতিটি চূড়া।

নারী হলো পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি। সভ্যতা সৃষ্টির লগ্ন থেকেই পৃথিবীর কল্যাণে নারীর অবদান অনঃস্বীকার্য। একজন নারী শুধুমাত্র কারো মা, বোন বা স্ত্রীই নয় বরং ধৈর্য , সংগ্রাম, সাহস, দৃঢ়তা ইত্যাদি বিশেষনের অন্যরূপ। নারীর হাত ধরেই হাজার হাজার বছর ধরে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তাই নারীকে অবহেলা করে কখনো উন্নতির নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে নারী পুরুষ সকলেরই মৌলিক অধিকার এক ও অভিন্ন – এ কথাটি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু নারীরা এখনো অনেকাংশেই পুরুষদের তুলনায় পিছিযয়ে। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিরাজমান। এ বৈষম্য বিধাতা প্রদত্ত নয়। বরং তার সৃষ্টির দ্বারা সৃষ্ট এ বৈষম্য। জন্ম থেকেই একটি কন্যা শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে নানা ক্ষেত্রে তার বৈষম্যের ফর্দটাও বড় হতে থাকে। সভ্যতা বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান দৃশ্যমান কখনও বা মায়ের রূপে, কখনও বা বোনের রূপে, কখনও বা মেয়ের রূপে আর কখনও বা স্ত্রীর রূপে। শিশুকাল থেকেই নারীরা সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনো নারীদেরকে পুরুষের অধস্তন করে রাখে। সকলক্ষেত্রে পুরুষ নারীর উপর তার আধিপত্ত বিস্তার করে। ফলে দক্ষ ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নারীরা বঞ্চিত হয়। অনেক চেষ্টার পর এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও অধিকাংশ স্থানে নারী পুরুষের বৈষম্য কমেনি। নারীর প্রতি এ বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজন-নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভংেয়র অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি। তাহলে সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন এক পরিস্থিতি বজায় থাকবে যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীনতা এবং মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে এবং নারী পুরুষ থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।

নারীকে মানুষই যদি না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য! নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই। নারী, কখনো সে মা, কখনো সে বোন, কখনো সে স্ত্রী, আবার কখনো সে কন্যা। প্রতিটি পুরুষের কাছেই হাতেগোনা এই কয়েকটি রূপ আছে তাদের। হয় সে মা, বোন, মেয়ে কিংবা স্ত্রী, আর নয়তো সে পরনারী। আর পরনারী মানেই নষ্টা, ভ্রষ্টা, অপয়া, দেহ-সর্বস্ব একটি সাকার অস্তিত্ব কিন্তু সে যেন কোনোভাবেই একজন নারী নয়। বলছি, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীর পরিস্থিতির কথা। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন পুরুষ বাঁচে তার নিজ পরিচয় নিয়ে। কাজ কিংবা বংশ বিভেদে তাদের পরিচয় বদলায়, বদলায় পদবি। কিন্তু এরপরেও তারা পুরুষ। এদিকে এখানে অধিকাংশ নারীরই তার নিজের কোনো পরিচয় নেই। তার পরিচয়, তিনি অমুক সাহেবের মেয়ে, স্ত্রী, মা কিংবা বোন। কিংবা তিনি ওই বাড়ির মেয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে। তাই এতে কারো তেমন কিছু হয়তো আসে-যায় না। তবে এই অস্তিত্বহীনতাই এক সময় ভয়ংকর রূপ নেয়। আবারও বলি, নারী মানেই মা, বোন, মেয়ে কিংবা স্ত্রী। আর এরই মধ্যে যদি তিনি কিছুই না হয়ে থাকেন, তবে তিনি পরনারী। মানে দেহ-সর্বস্ব একটি সাকার অস্তিত্ব। একজন পুুরুষের মতো কোনোভাবেই তিনি একজন নারী নন। নারী যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের পরিচয়ে নারী হতেই পারেন না। চারিত্রিক স্খলন রোধে নারীকে তাই এই রূপেই হাজির হতে হবে পৃথিবীর মানুষের কাছে। পুরুষ নারীকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসে না, ভালোবাসে মাকে, ভালোবাসে বোনকে, কন্যাকে। আর বিশেষ পরিস্থিতিতে স্ত্রীরূপের নারীকে। তাই একজন নারীকে আমরা শুধু নারী হিসেবে দেখতেই পারি না। পারি না তার প্রাপ্য সম্মান দিতেও। আমাদের দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাকেই সবচেয়ে উপরে রাখা হয়। কিন্তু অনেকেই ভুলে যান, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আগে তাদের নারী হিসেবে মানতে হবে। একজন পুরুষের মতোই একজন নারীও মানুষ- এই সহজ বিষয়টি সবার আগে আমাদের মেনে নিতে হবে। আপনি যদি নারীকে মানুষই না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য! নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটা কথা বেশ প্রচলিত রয়েছে, ‘নারী মায়ের জাত’। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নারী কি শুধুই মায়ের জাত? বেঁচে থাকার প্রয়োজনে একজন নারীকে বিভিন্ন সম্পর্কের নারী হয়ে বাঁচতে হয়, সেটা পুুরুষকেও হতে হয়, এর মানে কিন্তু আলাদা করে সে কোনো জাত নয়। সে কেবলি একজন নারী, একজন মানুষ। নিজের ইচ্ছের, পছন্দের, ভালোবাসার, সিদ্ধান্তের জাত। হকিন্তু গ্রহণ করতে হয় এখনো। নারীর যদি কিছু থেকে থাকে, তো শুধু একটি রক্ত-মাংসের দেহ। কিন্তু এই দেহকেও তার অন্যের মর্জিমাফিক চালাতে হয়। নিজের শরীরের প্রতি নারীর নিজের কোনো অধিকার নেই। বিয়ে যতদিন না হচ্ছে ততদিন এই শরীর বাবা-মায়ের, বিয়ে হলে স্বামীর। চুল কতখানি লম্বা রাখতে হবে, জামা-কাপড় কেমন পরবে, কীভাবে পরবে সব সিদ্ধান্তই এই প্রভুদের। আর নারী জীবনের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য বিয়ে করে স্বামী-সংসার ও সন্তান উৎপাদন। তারপর দিনের পর দিন ইচ্ছেতে বা অনিচ্ছেতে শয্যাসঙ্গী হয়ে আরেকজনের ঘরে, আরেকজনের হয়ে বেঁচে থাকা। এর অন্যথা কোনোভাবেই করা চলবে না, এটা যুগে যুগে পুরুষতন্ত্রের নির্দেশ। এ নির্দেশ অমান্য করলে চলবে না। এ নিয়মেই এত কাল সমাজ চলেছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা নিয়মনীতিকে মূর্খ ছাড়া আর কেই বা অপ্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করে! নারীর জন্য বাড়তি কোনো কিছু চাই না। নারীর জন্য কোনো বিশেষ অধিকার প্রয়োজন নেই। নারীকে শুধু দেখতে চাই মানুষ হিসেবে। পুরুষ যদি মানুষ হয়ে থাকে, তবে নারীও নিশ্চয়ই মানুষ- শুধু এই স্বীকৃতি চাই। নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে সমাজে থাকবে- শুধু এই নিশ্চয়তা।

ট্যাগস :

রাজবাড়ীর পাংশায় প্রান্তিক জনকল্যাণ সংস্থা কতৃক আয়োজিত ঈদ পূর্ণমিলন

নারী হয়ে উঠুক শক্তির প্রতিক – শারমিন রেজা লোটাস

আপডেট সময় ০৪:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

নারী হয়ে উঠুক শক্তির প্রতিক

লেখক, শারমিন রেজা লোটাস।

ওগো নারী
তোমরা আজ জেগে ওঠো
সবে মিলে এক হও।
বেরিয়ে এসো রাজপথে
ঘরকন্না থেকে এভারেস্ট বিজয় সর্বক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশের নারীদের জয় জয়কার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ সহ সব নারীকে অভিনন্দন শক্তি সাহস , আবেগ, মমতায় , হে নারী তােমাকে অভিবাদন। এখনই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের উপযুক্ত সময়। পুলিশ যাতে নারী বান্ধব হয় সে ব্যাপারে পুলিশ কে প্রশিক্ষন দেওয়া হােক। শিশুরা কয়েক বছরের মধ্যেই জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উন্নিত হয় ।তাদের কে শেখানাে দরকার মেয়ে সহপাঠিকে মেয়ে হিসাবে না দেখে মানুষ হিসাবে দেখতে হবে। হে নারী, থমকে দাঁড়াবার জন্য এতো টা পথ পার হয়া নয়। এগিয়ে চলো এখন কেবলি এগিযয় যাওয়া পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের জন্য সামাজিক ভাবে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। নারী ভিন্ন ভিন্ন রুপে আছে বলেই পৃথিবীটা এতো সুন্দর মাতা ভগিনী , স্ত্রী, কন্যা রুপে জীবন এতাে আনন্দময় ব্যাক্তিগত। নিরাপত্তাহীনতা সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য সত্ত্বেও নারীদের মেধার পরিচয় ,অর্থনৈতিক করমকান্দ। আসুন আমরা দেই নারীকে যােগ্যতম সন্মান মর্যাদার স্বীকৃতি। নিরাপত্তা প্রদানের প্রক্রিয়া ।সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরন, অন্যায় নির্যাতন থেকে নারী জাতি মুক্তি লাভ করুক।

‘নারী’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সামনে ভেসে উঠে মমতাময়ী মায়ের প্রতিচ্ছবি যার মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি। সেই অপার মমতার অধিকারী নারীদের কে কেন্দ্র করেই পালিত হয় নারী দিবস যদিও এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। অমিত সম্ভাবনার অধিকারী নারী শক্তির যথাযথ বিকাশ সম্ভব হয়না নূন্যতম সুযোগ এবং যথাযথ মুল্যায়নের অভাবে। পুরষশাসিত সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের ছোট করে দেখা হয়। দমিয়ে রাখা হয় তাদের দিগ্বিজয়ী শক্তিকে, তাদেরকে সম্মুখীন হতে হয় অনেক সহিংসতার। ধরণীতে নারীদের জয়গান গাওয়া হলেও এখনো প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনোও নারীরা নিজগৃহে অত্যাচারের মুখোমুখি! হয়, এখনোও তাদের সহ্য করতে হয় মানসিক যন্ত্রণার। যেই নারীরা নিজ পরিবারের কথা চিন্তা করে জীবন ত্যাগ করতে পারে তারাই পরিবার সহ সামাজিকভাবে প্রাপ্য সম্মান পায়না। নারীশ্রমিকদের এখনো আমাদের দেশে ছোট করে দেখা হয়, তারা তাদের ন্যায্য মজুরিও পায়না। এভাবেই বহুকাল থেকে নারীরা বৈষম্যের সম্মুখীন হয়। এখনো তাদের যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধির শিকার হতে হয়। এখনো খবরের পাতায় ধর্ষণের খবর অহরহ প্রকাশিত হয় অর্থাৎ নারীদের নিরাপত্তা প্রদান এখনো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়না। আমাদেরকে প্রথমেই সেই মানসিকতা দূর করতে হবে, পুরুষদের অংশগ্রহন এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি। আলোকিত হয়ে উঠুক নিজ শক্তিতে, আলোকিত করুক সমাজ ও পৃথিবীকে, নিজ উদ্যমে জয় করুর সাফল্যের প্রতিটি চূড়া।

নারী হলো পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি। সভ্যতা সৃষ্টির লগ্ন থেকেই পৃথিবীর কল্যাণে নারীর অবদান অনঃস্বীকার্য। একজন নারী শুধুমাত্র কারো মা, বোন বা স্ত্রীই নয় বরং ধৈর্য , সংগ্রাম, সাহস, দৃঢ়তা ইত্যাদি বিশেষনের অন্যরূপ। নারীর হাত ধরেই হাজার হাজার বছর ধরে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তাই নারীকে অবহেলা করে কখনো উন্নতির নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে নারী পুরুষ সকলেরই মৌলিক অধিকার এক ও অভিন্ন – এ কথাটি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু নারীরা এখনো অনেকাংশেই পুরুষদের তুলনায় পিছিযয়ে। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিরাজমান। এ বৈষম্য বিধাতা প্রদত্ত নয়। বরং তার সৃষ্টির দ্বারা সৃষ্ট এ বৈষম্য। জন্ম থেকেই একটি কন্যা শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে নানা ক্ষেত্রে তার বৈষম্যের ফর্দটাও বড় হতে থাকে। সভ্যতা বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান দৃশ্যমান কখনও বা মায়ের রূপে, কখনও বা বোনের রূপে, কখনও বা মেয়ের রূপে আর কখনও বা স্ত্রীর রূপে। শিশুকাল থেকেই নারীরা সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনো নারীদেরকে পুরুষের অধস্তন করে রাখে। সকলক্ষেত্রে পুরুষ নারীর উপর তার আধিপত্ত বিস্তার করে। ফলে দক্ষ ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নারীরা বঞ্চিত হয়। অনেক চেষ্টার পর এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও অধিকাংশ স্থানে নারী পুরুষের বৈষম্য কমেনি। নারীর প্রতি এ বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজন-নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভংেয়র অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি। তাহলে সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন এক পরিস্থিতি বজায় থাকবে যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীনতা এবং মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে এবং নারী পুরুষ থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।

নারীকে মানুষই যদি না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য! নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই। নারী, কখনো সে মা, কখনো সে বোন, কখনো সে স্ত্রী, আবার কখনো সে কন্যা। প্রতিটি পুরুষের কাছেই হাতেগোনা এই কয়েকটি রূপ আছে তাদের। হয় সে মা, বোন, মেয়ে কিংবা স্ত্রী, আর নয়তো সে পরনারী। আর পরনারী মানেই নষ্টা, ভ্রষ্টা, অপয়া, দেহ-সর্বস্ব একটি সাকার অস্তিত্ব কিন্তু সে যেন কোনোভাবেই একজন নারী নয়। বলছি, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীর পরিস্থিতির কথা। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন পুরুষ বাঁচে তার নিজ পরিচয় নিয়ে। কাজ কিংবা বংশ বিভেদে তাদের পরিচয় বদলায়, বদলায় পদবি। কিন্তু এরপরেও তারা পুরুষ। এদিকে এখানে অধিকাংশ নারীরই তার নিজের কোনো পরিচয় নেই। তার পরিচয়, তিনি অমুক সাহেবের মেয়ে, স্ত্রী, মা কিংবা বোন। কিংবা তিনি ওই বাড়ির মেয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে। তাই এতে কারো তেমন কিছু হয়তো আসে-যায় না। তবে এই অস্তিত্বহীনতাই এক সময় ভয়ংকর রূপ নেয়। আবারও বলি, নারী মানেই মা, বোন, মেয়ে কিংবা স্ত্রী। আর এরই মধ্যে যদি তিনি কিছুই না হয়ে থাকেন, তবে তিনি পরনারী। মানে দেহ-সর্বস্ব একটি সাকার অস্তিত্ব। একজন পুুরুষের মতো কোনোভাবেই তিনি একজন নারী নন। নারী যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের পরিচয়ে নারী হতেই পারেন না। চারিত্রিক স্খলন রোধে নারীকে তাই এই রূপেই হাজির হতে হবে পৃথিবীর মানুষের কাছে। পুরুষ নারীকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসে না, ভালোবাসে মাকে, ভালোবাসে বোনকে, কন্যাকে। আর বিশেষ পরিস্থিতিতে স্ত্রীরূপের নারীকে। তাই একজন নারীকে আমরা শুধু নারী হিসেবে দেখতেই পারি না। পারি না তার প্রাপ্য সম্মান দিতেও। আমাদের দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাকেই সবচেয়ে উপরে রাখা হয়। কিন্তু অনেকেই ভুলে যান, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আগে তাদের নারী হিসেবে মানতে হবে। একজন পুরুষের মতোই একজন নারীও মানুষ- এই সহজ বিষয়টি সবার আগে আমাদের মেনে নিতে হবে। আপনি যদি নারীকে মানুষই না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য! নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটা কথা বেশ প্রচলিত রয়েছে, ‘নারী মায়ের জাত’। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নারী কি শুধুই মায়ের জাত? বেঁচে থাকার প্রয়োজনে একজন নারীকে বিভিন্ন সম্পর্কের নারী হয়ে বাঁচতে হয়, সেটা পুুরুষকেও হতে হয়, এর মানে কিন্তু আলাদা করে সে কোনো জাত নয়। সে কেবলি একজন নারী, একজন মানুষ। নিজের ইচ্ছের, পছন্দের, ভালোবাসার, সিদ্ধান্তের জাত। হকিন্তু গ্রহণ করতে হয় এখনো। নারীর যদি কিছু থেকে থাকে, তো শুধু একটি রক্ত-মাংসের দেহ। কিন্তু এই দেহকেও তার অন্যের মর্জিমাফিক চালাতে হয়। নিজের শরীরের প্রতি নারীর নিজের কোনো অধিকার নেই। বিয়ে যতদিন না হচ্ছে ততদিন এই শরীর বাবা-মায়ের, বিয়ে হলে স্বামীর। চুল কতখানি লম্বা রাখতে হবে, জামা-কাপড় কেমন পরবে, কীভাবে পরবে সব সিদ্ধান্তই এই প্রভুদের। আর নারী জীবনের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য বিয়ে করে স্বামী-সংসার ও সন্তান উৎপাদন। তারপর দিনের পর দিন ইচ্ছেতে বা অনিচ্ছেতে শয্যাসঙ্গী হয়ে আরেকজনের ঘরে, আরেকজনের হয়ে বেঁচে থাকা। এর অন্যথা কোনোভাবেই করা চলবে না, এটা যুগে যুগে পুরুষতন্ত্রের নির্দেশ। এ নির্দেশ অমান্য করলে চলবে না। এ নিয়মেই এত কাল সমাজ চলেছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা নিয়মনীতিকে মূর্খ ছাড়া আর কেই বা অপ্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করে! নারীর জন্য বাড়তি কোনো কিছু চাই না। নারীর জন্য কোনো বিশেষ অধিকার প্রয়োজন নেই। নারীকে শুধু দেখতে চাই মানুষ হিসেবে। পুরুষ যদি মানুষ হয়ে থাকে, তবে নারীও নিশ্চয়ই মানুষ- শুধু এই স্বীকৃতি চাই। নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে সমাজে থাকবে- শুধু এই নিশ্চয়তা।