ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:১৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • ২০৪ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ০৮ ডিসেম্বর
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, প্রতারণা ও দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মো: জুয়েল হোসেন ও মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের পক্ষে মো: কামরুল হোসেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলায় প্রশিক্ষক, টিকাদান কর্মীর প্রশিক্ষণ, টিকা পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার বাবদ প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। ডা: বাহাউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থায়ী টিকা ক্যাম্প বাদে ২০২১ সালের মার্চ হতে মে পর্যন্ত ৫ টি ইউনিয়নে টিকাদান কার্যক্রম দেখিয়েছেন। কিন্তু সেসময় উপজেলার খলশী ইউনিয়নে ১ দিন টিকা কার্যক্রম করে মাত্র ৭২ জন লোককে টিকা প্রদান করেছেন। আর বাকি ৪টি ইউনিয়নে কোন টিকা প্রদান করেননি। ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদার যোগসাজশে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ভূয়া টিকা প্রদান কার্যক্রম দেখিয়ে ভূয়া পরিবহন বিল, ভূয়া প্রশিক্ষণ বিল, ভূয়া পরিদর্শন বিল, টিকাদান কর্মী এবং সেচ্ছাসেবিদের নামে ভূয়া আপ্যায়ন বিল, ভূয়া ব্যাগ ক্রয় বিল-ভাউচার করে বরাদ্দকৃত ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দৌলতপুর উপজেলায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার হিসাবে ১১৯ জন কাজে যোগদান করে। এরপর কাজে যোগদানের তারিখ হতে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ২টি বিলে মোট ৯ মাসের বেতন প্রদানের জন্য বিল একুইটেন্সে সকলের স্বাক্ষর নেন। সকল ভলান্টিয়ারের স্বাক্ষর নেওয়ার পর প্রত্যেকের প্রাপ্ত ২৯১৬০ টাকার পরিবর্তে ৬৩৬০ টাকা কম দিয়ে প্রত্যেককে ২২৮০০ টাকা করে প্রদান করেন। এতে ১১৯ জনের বেতন থেকে মোট ৭,৫৬,৮৪০ টাকা আত্মসাৎ করে ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদার ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অভিযোগকারী মো: জুয়েল হোসেন ও মো: কামরুল হোসেনসহ একাধিক ভলান্টিয়ারা জানান, বিল ভাউচারে যেসব খবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো তো দূরের কথা আমাদের কোন খাবারই দেয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আমাদের প্রত্যেককে দিনপ্রতি মাত্র ৪০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। অথচ প্রতিদিনের বিল ভাউচারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। আমাদের না খাইয়ে রেখে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। সেসময় আমরা এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের বদলির ভয় দেখান এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, তিনি আরো বলেন আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তার চাকুরী খেয়ে ফেলবো।

ভলান্টিয়ারদের খাবারের বিলের সত্যতা জানতে অখিল মিষ্টান্ন ভান্ডার (পক্ষু ঘোষ) এর স্বত্তাধিকারী নিখিল চন্দ্র ঘোষের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেসব খাবার বিলের কথা বলছেন সেসব খাবার তো আমি বিক্রিই করি না। আমার দোকানে মিষ্টি আর রুটি ছাড়া কিছু বিক্রি করি না। আমার দোকানের নামে যে বিল ভাউচার করা হয়েছে সব ভূয়া, হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার দোকান থেকে এক কেজি মিষ্টিও কিনে নাই।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক) ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়াররা ঠিকমত ডিউটি করেনি, এ বিষয়ে তাদের সতর্ক করলে তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকাদান কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আমার সময়ে পাশ হয়নি, আত্মসাৎ করবো কিভাবে? ওইসব বিল ভাউচার সাবমিট করার পর আমি বদলি হয়ে গেছি, বর্তমানে যে কর্মকর্তা আছে উনার সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শাহ্ আলম সিদ্দিকী বলেন, ওই সময়ের বিল ভাউচার আমি এখানে আসার আগে সাবমিট করা হয়েছে। কিছু বিল পাশ হয়েছে, সেগুলো ভলান্টিয়ারদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু বাকি আছে, পাশ হলে পরিশোধ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় আওয়ামীলীগ নেতার দরিদ্রদের মাঝেশাড়ী ও লুঙ্গী বিতরণ

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট সময় ১০:১৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ০৮ ডিসেম্বর
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, প্রতারণা ও দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মো: জুয়েল হোসেন ও মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের পক্ষে মো: কামরুল হোসেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলায় প্রশিক্ষক, টিকাদান কর্মীর প্রশিক্ষণ, টিকা পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার বাবদ প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। ডা: বাহাউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থায়ী টিকা ক্যাম্প বাদে ২০২১ সালের মার্চ হতে মে পর্যন্ত ৫ টি ইউনিয়নে টিকাদান কার্যক্রম দেখিয়েছেন। কিন্তু সেসময় উপজেলার খলশী ইউনিয়নে ১ দিন টিকা কার্যক্রম করে মাত্র ৭২ জন লোককে টিকা প্রদান করেছেন। আর বাকি ৪টি ইউনিয়নে কোন টিকা প্রদান করেননি। ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদার যোগসাজশে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ভূয়া টিকা প্রদান কার্যক্রম দেখিয়ে ভূয়া পরিবহন বিল, ভূয়া প্রশিক্ষণ বিল, ভূয়া পরিদর্শন বিল, টিকাদান কর্মী এবং সেচ্ছাসেবিদের নামে ভূয়া আপ্যায়ন বিল, ভূয়া ব্যাগ ক্রয় বিল-ভাউচার করে বরাদ্দকৃত ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দৌলতপুর উপজেলায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার হিসাবে ১১৯ জন কাজে যোগদান করে। এরপর কাজে যোগদানের তারিখ হতে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ২টি বিলে মোট ৯ মাসের বেতন প্রদানের জন্য বিল একুইটেন্সে সকলের স্বাক্ষর নেন। সকল ভলান্টিয়ারের স্বাক্ষর নেওয়ার পর প্রত্যেকের প্রাপ্ত ২৯১৬০ টাকার পরিবর্তে ৬৩৬০ টাকা কম দিয়ে প্রত্যেককে ২২৮০০ টাকা করে প্রদান করেন। এতে ১১৯ জনের বেতন থেকে মোট ৭,৫৬,৮৪০ টাকা আত্মসাৎ করে ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও মো: ফিরোজ আহমেদ তালুকদার ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অভিযোগকারী মো: জুয়েল হোসেন ও মো: কামরুল হোসেনসহ একাধিক ভলান্টিয়ারা জানান, বিল ভাউচারে যেসব খবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো তো দূরের কথা আমাদের কোন খাবারই দেয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আমাদের প্রত্যেককে দিনপ্রতি মাত্র ৪০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। অথচ প্রতিদিনের বিল ভাউচারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। আমাদের না খাইয়ে রেখে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। সেসময় আমরা এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের বদলির ভয় দেখান এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, তিনি আরো বলেন আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তার চাকুরী খেয়ে ফেলবো।

ভলান্টিয়ারদের খাবারের বিলের সত্যতা জানতে অখিল মিষ্টান্ন ভান্ডার (পক্ষু ঘোষ) এর স্বত্তাধিকারী নিখিল চন্দ্র ঘোষের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেসব খাবার বিলের কথা বলছেন সেসব খাবার তো আমি বিক্রিই করি না। আমার দোকানে মিষ্টি আর রুটি ছাড়া কিছু বিক্রি করি না। আমার দোকানের নামে যে বিল ভাউচার করা হয়েছে সব ভূয়া, হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার দোকান থেকে এক কেজি মিষ্টিও কিনে নাই।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক) ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়াররা ঠিকমত ডিউটি করেনি, এ বিষয়ে তাদের সতর্ক করলে তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিকাদান কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আমার সময়ে পাশ হয়নি, আত্মসাৎ করবো কিভাবে? ওইসব বিল ভাউচার সাবমিট করার পর আমি বদলি হয়ে গেছি, বর্তমানে যে কর্মকর্তা আছে উনার সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শাহ্ আলম সিদ্দিকী বলেন, ওই সময়ের বিল ভাউচার আমি এখানে আসার আগে সাবমিট করা হয়েছে। কিছু বিল পাশ হয়েছে, সেগুলো ভলান্টিয়ারদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু বাকি আছে, পাশ হলে পরিশোধ করা হবে।