ঢাকা ০৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকার মালামাল গায়েব

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:০০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জোতকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকার মালামাল গায়েব হয়ে গেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। তবে বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ পুরাতন মালামাল বিক্রি করেছেন এবং বিক্রয়ের টাকা স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের কাছে জমা রেখেছেন।

জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বাঘুটিয়ার কুঠিরহাট গ্রামে জোতকাশি নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন স্থানীয়রা। ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি রেজিস্টার করা হয়। নদী ভাঙণের কবলে পড়লে বিদ্যালয়টি কুঠিরহাট থেকে মুন্সিকান্দি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করে সরকার। ওই বছরই ১৩ লক্ষাধিক টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয় সরকার। লোহার এঙ্গেল ও টিন দিয়ে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করা হয়। একই বছরের শেষ নাগাদ বিদ্যালয়টি আবারও নদী ভাঙণের কবলে পড়লে পার্শ্ববর্তী খলশি ইউনিয়নের পাড়রৌহা গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ভেঙে পড়া ঘরের মালামাল রাখা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র বাসভবনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস তিনেক আগে জোতকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের মালামালগুলো বিক্রি করে দেন সহকারি শিক্ষক আব্দুল মাজেদ। স্থানীয় ভাঙারী ব্যবসায়ী সাঈদের কাছে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করা হয়। বিক্রিতে সহযোগিতা করেন বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের ডান হাত খ্যাত আব্দুস সাত্তার ও আয়নাল। দেড় শতাধিক মন লোহার এঙ্গেল ও ভাঙাচোরা টিন বিক্রি করা হয় ৫০ টাকা কেজি দরে। আর মালামাল বিক্রির টাকা রাখা হয় চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের কাছে। শিক্ষক আব্দুল মাজেদ আবার চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের চাচাতো ভাই।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী তাকে পুরাতন মালামাল বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন করা হয়েছে। পরে আব্দুস সাত্তার, আয়নাল, সাঈদ সাতটি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসে সন্ধ্যার দিকে মালামাল নিয়ে গেছে।

তবে বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী ও সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য যাদব আলী শেখ জানান, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী মিলে মালামালগুলো বিক্রি করেছে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ডকুমেন্ট ছাড়া মালামাল দিতে না চাইলে কোন সমস্যা হবে না বলে চেয়ারম্যান তাকে আশ্বস্ত করেন।

জোতকাশি বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দাবি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনেরও।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিমও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের কিছু পুরাতন মালামাল আছে এবং সেগুলো টেন্ডার করা প্রয়োজন বলে প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে সেগুলো কবে, কার কাছে কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রি করতে হবে উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে মূল্যনির্ধারণপূর্বক নিলাম আহ্বান করে। এবং নিলামে যে সর্বোচ্চ দর দিবে সেই মালামাল পাবে। জোতকাশি বিদ্যালয়ের মালামালের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যদি অনিয়ম পাওয়া যায় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারের অগ্রনায়ক মুফতি রুহুল আমিন মাহমুদী

বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকার মালামাল গায়েব

আপডেট সময় ০৫:০০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জোতকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকার মালামাল গায়েব হয়ে গেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। তবে বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ পুরাতন মালামাল বিক্রি করেছেন এবং বিক্রয়ের টাকা স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের কাছে জমা রেখেছেন।

জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বাঘুটিয়ার কুঠিরহাট গ্রামে জোতকাশি নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন স্থানীয়রা। ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি রেজিস্টার করা হয়। নদী ভাঙণের কবলে পড়লে বিদ্যালয়টি কুঠিরহাট থেকে মুন্সিকান্দি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করে সরকার। ওই বছরই ১৩ লক্ষাধিক টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয় সরকার। লোহার এঙ্গেল ও টিন দিয়ে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করা হয়। একই বছরের শেষ নাগাদ বিদ্যালয়টি আবারও নদী ভাঙণের কবলে পড়লে পার্শ্ববর্তী খলশি ইউনিয়নের পাড়রৌহা গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ভেঙে পড়া ঘরের মালামাল রাখা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র বাসভবনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস তিনেক আগে জোতকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের মালামালগুলো বিক্রি করে দেন সহকারি শিক্ষক আব্দুল মাজেদ। স্থানীয় ভাঙারী ব্যবসায়ী সাঈদের কাছে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করা হয়। বিক্রিতে সহযোগিতা করেন বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের ডান হাত খ্যাত আব্দুস সাত্তার ও আয়নাল। দেড় শতাধিক মন লোহার এঙ্গেল ও ভাঙাচোরা টিন বিক্রি করা হয় ৫০ টাকা কেজি দরে। আর মালামাল বিক্রির টাকা রাখা হয় চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের কাছে। শিক্ষক আব্দুল মাজেদ আবার চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের চাচাতো ভাই।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী তাকে পুরাতন মালামাল বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন করা হয়েছে। পরে আব্দুস সাত্তার, আয়নাল, সাঈদ সাতটি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসে সন্ধ্যার দিকে মালামাল নিয়ে গেছে।

তবে বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী ও সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য যাদব আলী শেখ জানান, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী মিলে মালামালগুলো বিক্রি করেছে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ডকুমেন্ট ছাড়া মালামাল দিতে না চাইলে কোন সমস্যা হবে না বলে চেয়ারম্যান তাকে আশ্বস্ত করেন।

জোতকাশি বিদ্যালয়ের পুরাতন মালামাল বিক্রির বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দাবি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনেরও।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিমও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের কিছু পুরাতন মালামাল আছে এবং সেগুলো টেন্ডার করা প্রয়োজন বলে প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে সেগুলো কবে, কার কাছে কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রি করতে হবে উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে মূল্যনির্ধারণপূর্বক নিলাম আহ্বান করে। এবং নিলামে যে সর্বোচ্চ দর দিবে সেই মালামাল পাবে। জোতকাশি বিদ্যালয়ের মালামালের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যদি অনিয়ম পাওয়া যায় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।